মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের কারপাশা ব্লকে প্রথমবারের মতো ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে ধান চাষ উদ্বোধন হয়েছে। ৪৬ জন কৃষকের ৫০ একর জমিতে কৃষি প্রণোদনার আওতায় এ পদ্ধতির চাষ শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের ধান এসএলএইচ-৮ চাষাবাদ করা হচ্ছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক ৯ লাখ টাকা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, সব কৃষক একই সময়ে চাষাবাদ করেন না। সবার বীজতলা একসময় গজায় না, স্বভাবতই তাই চারা রোপণের সময়ও হয় ভিন্ন, ধানও তাই একসময়ে পাকে না। একই কাজের জন্য বিভিন্ন জমিতে আলাদা সময়ে কৃষি যন্ত্রগুলোর ব্যবহার তাই অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী হয় না। একটি এলাকার কোনো একটি কৃষিপণ্য চাষের পুরো প্রক্রিয়া একই সিস্টেমের আওতায় নিয়ে জমির আল বজায় রেখে লাভজনকভাবে যন্ত্রের ব্যবহার করে বোরো চাষে এ রকমেরই একটা কার্যকরী উপায় বের করেছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। পদ্ধতিটির নাম দিয়েছেন তাঁরা সমলয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান-উদ-দৌলা দেশ রূপান্তরকে জানান, সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধ, আন্তঃপরিচর্যার জন্য যন্ত্রপাতি ও ধান বপন থেকে শুরু করে মাড়াই সবই হবে অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে। এই চাষাবাদে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণ না করে প্লাস্টিকের ট্রে-তে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে লাগানো হয়েছে ধানের বীজ। সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষে বীজ বপনে ২৫ দিন ও চারা রোপণের ১২০ দিনের মধ্যে কৃষক ফসল ঘরে তুলতে পারবে।
তিনি আরও জানান, এ পদ্ধতিতে কৃষকের বীজ ও সার কম লাগবে। কম খরচে অধিক পরিমাণে ফসল ঘরে তোলা যায় এ পদ্ধতিতে। গত বছর উপজেলার আটিগাঁও ব্লকে প্রথমবারের মতো সমলয় পদ্ধতিতে একটি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ প্রদর্শনী থেকে কৃষকরা ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন।
কারপাশা গ্রামের কৃষক আজিজুল হক জানান, এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে বীজতলা তৈরিতে অর্ধেক বীজ লেগেছে। এতে বীজ খরচ সাশ্রয় হয়েছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে প্রায় এক একর জমির ধান আবাদ করেছেন। এই চাষাবাদে খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। একই গ্রামের কৃষক টুনাই মোল্লাসহ অনেক কৃষকরা একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে ধানচাষে এক একর জমিতে খরচ পড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়া উইডার মেশিন দিয়ে নিড়ানি দেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা। আগে যেখানে পরিচর্যা বাবদ খরচ হতো প্রায় ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া এই পদ্ধতির চাষাবাদে একরপ্রতি হাইব্রিডে ৭০ মণের স্থলে প্রায় ১০০ মণ ধান উৎপাদিত হবে। এই ধান পাকার পর কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কেটে মাড়াই করা হবে। এতে একরপ্রতি সাশ্রয় হবে ২০ হাজার টাকা।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের কৃষিজমি বাড়ছে না। কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের জোগান দিতে হয়। তাই অল্প জমিতে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন করতে হবে। সমলয় এমনই একটি পদ্ধতি। গত বছর এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে মুন্সীগঞ্জের কৃষক লাভবান হন। তাই অন্য কৃষকরাও এ বছর চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এই পদ্ধতির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
Leave a Reply