উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সব কৃষক একই সময়ে চাষাবাদ করেন না। সবার বীজতলা একসময় গজায় না, স্বভাবতই তাই চারা রোপণের সময়ও হয় ভিন্ন, ধানও তাই একসময়ে পাকে না। একই কাজের জন্য বিভিন্ন জমিতে আলাদা সময়ে কৃষি যন্ত্রগুলোর ব্যবহার তাই অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী হয় না। একটি এলাকার কোনো একটি কৃষিপণ্য চাষের পুরো প্রক্রিয়া একই সিস্টেমের আওতায় নিয়ে জমির আল বজায় রেখে লাভজনকভাবে যন্ত্রের ব্যবহার করে বোরো চাষে এ রকমেরই একটা কার্যকরী উপায় বের করেছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। পদ্ধতিটির নাম দিয়েছেন তাঁরা ‘সমলয়’।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান-উদ-দৌলা জানান, সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধ, আন্তঃপরিচর্যার জন্য যন্ত্রপাতি ও ধান বপন থেকে শুরু করে মাড়াই সবই হবে অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে হয়েছে। এই চাষাবাদে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণ না করে প্লাস্টিকের ট্রে-তে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে লাগানো হয়েছে ধানের বীজ। সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষে বীজ বপনে ২৫ দিন ও চারা রোপণের ১২০ দিনের মধ্যে কৃষক ফসল ঘরে তুলতে পারে।
তিনি আরও জানান, এ পদ্ধতিতে কৃষকের বীজ ও সার কম লেগেছে। কম খরচে অধিক পরিমাণে ফসল ঘরে তোলা যায় এ পদ্ধতিতে। গত বছর উপজেলার আটিগাঁও ব্লকে প্রথমবারের মতো সমলয় পদ্ধতিতে একটি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ প্রদর্শনী থেকে কৃষকরা ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন।
কারপাশা গ্রামের কৃষক হান্নান কাজী জানান, এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে বীজতলা তৈরিতে অর্ধেক বীজ লেগেছে। এতে বীজ খরচ সাশ্রয় হয়েছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে প্রায় এক একর জমির ধান আবাদ করেছেন। এই চাষাবাদে খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। একই গ্রামের কৃষক আবু তাহের মোল্লা ও খোকন সরকার একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
কৃষক কিনাই মোল্লা জানান, গত বছর ২ একর ৮০ শতাংশ জমিতে ধানচাষে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এবার উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সার, বীজ পাওয়ায় এবং আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে বীজ বপন ও পাকা ধান কেটে দেওয়ায় খরচ হবে আনুমানিক ৬০ হাজার টাকা। প্রায় লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। আমরা শুধু ক্ষেতে নিড়ানি ও সেচ দিয়েছি।
অপর তরুণ কৃষক আবিদ হাসান, এ সময়ে শ্রমিক পাওয়া কষ্টসাধ্য। তিন বেলা খাইয়ে এক হাজার টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যায় না। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে ধানকাটা, মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের কাজ হয়ে যাওয়ায় শ্রম, সময় ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, আমাদের কৃষিজমি বাড়ছে না। কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের জোগান দিতে হয়। তাই অল্প জমিতে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সমলয় এমনই একটি পদ্ধতি। গত বছর এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে মুন্সীগঞ্জের কৃষক লাভবান হয়েছেন। তাই অন্য কৃষকরাও এ বছর চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এই পদ্ধতির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
Leave a Reply