আবারও সর্বনাশা পদ্মার ছোঁবলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মানচিত্রে আঘাত হেনেছে। এতে লৌহজংয়ের মানচিত্র থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নটি। রাক্ষুসে পদ্মার কড়াল গ্রাসে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে বর্তমানে রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন। এরমধ্যে শুধুমাত্র একটি ইউনিয়ন বৌলতলী ছাড়া বাকি ৯টি ইউনিয়নে কম বেশি নদী ভাঙ্গনের খেলা চলছে। এরমধ্যে কলমা, বেজগাঁও, লৌহজং-তেউটিয়া ও কুমারভোগ ইউনিয়নের ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে । তার মধ্যে লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের ১টি ওয়ার্ডসহ বাকি ৮টি ওয়ার্ডে বেশ কিছু অংশ পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মা আবারও রুদ্র মুর্তির আকার ধারণ করেছে। এতে পদ্মা তীরের মানুষের ঘুম নেই। বিরাহীন বৃষ্টিতে দিশেহারা অবস্থায় শেষ সম্বলটুকু রক্ষার চেষ্টা করছে নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বড়নওপাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে ১০টি বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় এক নিমির্ষে। গত দুই দিন ধরে তীব্র ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে এই এলাকায়। এ দিকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুইদিনে বড় নওপাড়া গ্রামের নীল কমল রাজবংশী, জীতেন রাজবংশী, সুধন্য রাজবংশী, স্বপন রাজবংশী, মিলন রাজবংশী, যোগেশ রাজবংশী, মানিক ব্রক্ষম, লেলিন মাঝি, ইকবাল মৃধা ও রিদয় মৃধার বসত বাড়ি পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে যায় ।
লৌহজং-তেউটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মা ভাঙ্গনের খবর পেয়ে জরুরী ব্যবস্থা হিসেবে নদী শাসন ও ভাঙ্গন রোধে শুক্রবার সকাল থেকে পুরোদমে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে ৩২ কোটি টাকার সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকায় ২৫০ কেজি ওজনের প্রায় ৮ লাখ বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। এরপর বালু ও সিমেন্ট মিশ্রিত আরোও পোনে ২ লাখ বস্তা ফেলা হবে পদ্মা সেতুর বাম তীরে। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামের ভাঙ্গন কবলীত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গণরোধে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই প্রায় দেড় কিলোমিটার যায়গা নদী গর্ভে চলে গেছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও জন প্রতিনিধি তৎপরতায় ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় দ্রুত গতিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে ।
মুন্সীগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, আপদকালিন এ সময়ে আমরা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গণ প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। এদিকে লৌহজংয়ের খড়িয়া থেকে টঙ্গীবাড়ির দিঘীর পাড় পর্যন্ত ৯.১০ কিলেমিটার দীর্ঘ এলাকায় পদ্মা ভাঙ্গন রোধে সরকার প্রায় ৪শ’ ৪৬ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে গত বছরের এপ্রিল থেকে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। কাজের অগ্রগতি মাএ ২০ শতাংশ। এই কাজ ধীর গতিতে এগোচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় সাংসদ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, পদ্মার ভাঙ্গণরোধে ৪শ’ ৪৬ কোটি টাকার বাঁধ নির্মাণ চলাকালীনের বাইরে আরও সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙ্গণ দেখা দেয়ায় নতুন ৩২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বর্ষা মৌসুমের আগেই নদী ভাঙ্গণ দেখা দেয়ায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী ভাঙ্গণরোধে সকল চেষ্টা চালাচ্ছেন। শুধু বালুর বস্তা ফেলাই নয় ভাঙ্গণরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যারা পদ্মা নদীতে অবৈধ ভাবে ড্রেজিং করে বালু কাটছে তাদের কোন ছাড় নেই। অবৈধ বালু লুটকারীদের বিরেুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী নরেন্দ্র সংকর চক্রবর্তী জানান, পদ্মা ভাঙ্গণরোধে ৪শ’ ৪৬ কোটি টাকার ৯.১০ পয়েন্ট স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর সাথে আরও ৪.০০ পয়েন্ট ৩২ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে নদী ভাঙ্গণরোধে জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
Leave a Reply