বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আ.লীগের লোকজনের পুর্ণবাসনের প্রক্রিয়া চালু হয়ে গেছে। সরকারের মধ্যে নানাভাবে এ কার্যক্রম চলছে। কখনো উপদেষ্টার নামে, কখনো বিশেষ সহকারীর নামে আ.লীগের লোকজনের পুর্ণরবাসন হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে উপজেলা বিএনপি ও সর্বস্তরের ব্যানারের আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা।
ড. আসাদুজ্জামান রিপন আরও বলেন, যারা শেখ হাসিনার সহযোগী ছিলেন, দুর্নীতির সহযোগী ছিলেন, যারা গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন,নশেখ হাসিনাকে সৈরাচারী পদক্ষেপ নিতে নানাভাবে উৎসাহিত করেছিলেন, বেশ-বেশ বলে যারা বাহাবা দিয়েছেন। সেই সমস্ত লোককে আমরা ক্রমেই দেখতে পাচ্ছি ইউনুস সরকারের প্রশাসনে যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন।
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, কয়েকদিন আগে শফিউর রহমান নামে একজন সাবেক কূটনৈতিককে, কূটনৈতিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একজন বিচারপতি আছেন ইমরুল কায়েস। আমার নেত্রীর বিচারের নামে, অবিচার করেছে। আমার সঙ্গেও বিচারের নামে অবিচার করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস আপনার প্রতি আমাদের অনুরোধ। যারা শেখ হাসিনার সরকারের কাছে ছিলেন, পাশে ছিলেন, যারা তালিয়া বাজাতেন, তাদেরকে আপনার পাশ থেকে সরাতে হবে।নয়তো এখন শুধু আমরা দুটো নাম বললাম, এরপরে আমরা আরও বেশি বেশি নাম প্রচার করব। পুলিশে প্রশাসনে, বিচার বিভাগে, নানা জায়গায় পতিত সরকারের এজেন্টরা লুকিয়ে আছে। এই সমস্ত নৌকার প্রতীক মার্কা লোকদেরকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারকে আমরা এই মাসটির সময় দিতে চাই। পুলিশ প্রশাসনে বিচার, বিভাগসহ রাষ্ট্রের যে সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে, দ্রুত তাদের চিহ্নিত করে বিদায় করেন, তাহলে তা না হলে তাঁরা সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন আন্দোলন বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কথিত আন্দোলনের নামে সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। সেনাবাহিনীর একজন মেজর বলেছেন, এই আন্দোলনের পেছনে শুরশুরি আছে। আর এই সুড়সুড়ি কারা দিচ্ছে? পতিত স্বৈরাচারের এজেন্টরা। কারণ তাদের কাছে অনেক কালো টাকা রয়েছে। তারা সরকারকে বিব্রত করবে, প্রশ্নবিদ্ধ করবে, আমরা যে গণতান্ত্রিক ধারায় আগাচ্ছি তারা তা ব্যাহত করার চেষ্টা করবে। তাই সরকারকে এই সব চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সভায় শিমুলিয়া ঘাট আন্তর্জাতিক মানের ইনল্যান্ড কনটেইনার পোর্ট নির্মাণ, গ্রাম জনপদ রক্ষায় নদী শাসনের ব্যবস্থা, শিমুলিয়া ঘাট ঘেষে পদ্মার পাড় দিয়ে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণ করে ইকো ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা গ্রহণে বিদেশ নির্ভরতা দূর করতে পদ্মা সেতুর উত্তর প্রান্তে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ওঠা নামার সুযোগ সম্বলিত আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নির্মাণ, বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের উদ্দেশ্যে বহুমাত্রিক আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট তৈরী, সারা দেশে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ ও অবৈধ বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত বাল্কহেট-কাটার জব্দ এবং বালু দস্যুদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, শিমুলিয়া ঘাটে ইজারাদারের অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করা, শিমুলিয়া ঘাটে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ টোল আদায় বন্ধ করা, মাদক বেচাকিনির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তর করা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা, লৌহজং উপজেলায় রাস্তাঘাট গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় আর্থিক দুর্নীতিরোধ করতে স্থানীয় গণ্যমান্য নাগরিকদের প্রকল্পে সম্পৃক্ত করাসহ ১১ দফা দাবি উল্লেখ করা হয়।
লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল খানের সভাপতিত্বে ও জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আতাউর রহমান খানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. জাকারিয়া মোল্লা, শহর ছাত্রদলের আহবায়ক মো. রোমান হোসেন, লৌহজং সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব জহির আমিন দেওয়ান।
Leave a Reply